বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ১২:৩০
দৃষ্টি সংযত রাখা গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং সৌভাগ্য অর্জনের মূল উপায়

ইরানের হাওজায়ে ইলমিয়ার সুপ্রিম কাউন্সিলের আয়াতুল্লাহ রজবী সদস্য চোখ ও কানকে হৃদয়ে জ্ঞান প্রবেশের প্রধান দ্বার হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং কুরআনের আয়াত ও মাসুমিন (আ.)-এর হাদিসের উপর ভিত্তি করে বলেছেন, দৃষ্টি সংযত রাখা গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং পার্থিব ও পারলৌকিক সৌভাগ্য অর্জনের একটি মৌলিক উপায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:  ইমাম খোমেনী (রহ.) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান আয়াতুল্লাহ মাহমুদ রজবী কোমের মা'সুমিয়া ইলমিয়া মাদ্রাসায় দারসে আখলাক বা নৈতিকতা বিষয়ক ক্লাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথে চোখ ও কানের সংযত রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

তিনি সূরা ইসরা'র ৩৬ নং আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, যেখানে আল্লাহ বলেন,
«إِنَّ السَّمْعَ وَ الْبَصَرَ وَ الْفُؤَادَ کُلُّ أُولَئِکَ کَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا»،
“নিশ্চয়ই কান, চোখ এবং হৃদয়—এগুলোর সবকিছু সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, চোখ এবং কান দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয় হিসেবে সঠিক বা ভুল জ্ঞান হৃদয়ে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

এই আয়াতের মাধ্যমে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, চোখ ও কানের মাধ্যমে আমরা যা দেখি ও শুনি, তা আমাদের হৃদয় ও মনকে প্রভাবিত করে। তাই এই ইন্দ্রিয়গুলোর সঠিক ব্যবহার এবং সংযত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা কল্যাণকর জ্ঞান ও নৈতিকতা অর্জন করতে পারি এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকতে পারি।

আয়াতুল্লাহ রজবী মাসুমিন (আ.)-এর হাদিসের উপর ভিত্তি করে চোখের যত্ন নেওয়াকে গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং সৌভাগ্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য ইমাম সাদিক (আ.)-এর একটি হাদিসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন,
مَا اغْتَنَمَ أَحَدٌ بِمِثْلِ غَضِّ الْبَصَرِ
অর্থাৎ, “কেউই চোখ সংযত রাখার মাধ্যমে (যতটা লাভবান হয়েছে তা) অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে ততটা লাভবান হয়নি।”

হাওজায়ে ইলমিয়ার সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য আরেকটি হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন,
«غُضُّوا أَبْصَارَکُمْ تَرَوْنَ الْعَجَائِبَ»
অর্থাৎ “তোমাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখো, তাহলে তোমরা বিস্ময়কর (ঐশী) বিষয়গুলো দেখতে পাবে।” এই হাদিসটি ইঙ্গিত করে যে, বাহ্যিক দৃষ্টি সংযত রাখার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক দৃষ্টি খুলে যায় এবং সে বিশ্বজগতের গভীর সত্য উপলব্ধি করতে পারে। 

এই হাদিসগুলোর মাধ্যমে আয়াতুল্লাহ রজবী ব্যাখ্যা করেছেন যে, চোখের সংযম শুধু গুনাহ থেকে বাঁচায় না, বরং এটি আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও সৌভাগ্য অর্জনের পথও প্রশস্ত করে।

চোখের যত্ন নেওয়ার ব্যবহারিক উপায়

আয়াতুল্লাহ রজবী চোখের যত্ন নেওয়ার ব্যবহারিক উপায়গুলো উল্লেখ করে বলেছেন, গুনাহের দৃশ্যের মুখোমুখি হলে চোখ কন্ট্রোল বা নিচু করা কিংবা দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেয়া- এই পথে প্রথম পদক্ষেপ। তিনি সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে আল্লাহ বলেন,
قُلْ لِلْمُؤْمِنِینَ یَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ
অর্থাৎ, “মুমিনদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে।”

নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য স্পষ্ট করে বলেছেন, গুনাহের দৃশ্যের মুখোমুখি হলে মানুষের উচিত চোখ নিচু করা এবং হারাম দৃষ্টি এড়ানো। 

আয়াতুল্লাহ রজবী গুনাহের মজলিস থেকে দূরে থাকাকে দ্বিতীয় উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, এমন মজলিসে উপস্থিত হওয়া- যেখানে গুনাহের সুযোগ তৈরি হয়, মানুষকে হারাম দৃষ্টির দিকে নিয়ে যায়- মানুষের উচিত এমন মজলিস থেকে দূরে থাকা। 

তৃতীয় ব্যবহারিক উপায় হিসেবে আয়াতুল্লাহ রজবী আখিরাত ও কিয়ামতের স্মরণকে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, কিয়ামত ও আখিরাতের স্মরণ মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে রাখে এবং চোখের যত্ন (নিযন্ত্রণ) নেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। মানুষ যত বেশি আখিরাতের কথা স্মরণ করবে, তত কম গুনাহের দিকে আকৃষ্ট হবে। 

হাওজায়ে ইলমিয়ার সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য আহলে বাইত (আ.)-এর সহযোগিতা প্রার্থনাকে আরেকটি কার্যকর উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, সব বিষয়ে, এমনকি চোখের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও আহলে বাইত (আ.)-এর সাহায্য নেওয়া খুবই কার্যকর। আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তি হিসেবে আহলে বাইত (আ.) এই পথে মানুষকে সাহায্য করতে পারেন। 

আয়াতুল্লাহ রজবী ইতিবাচক কাজে সময় কাটানো, যেমন কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া এবং উপকারী বই পড়াকে গুনাহ থেকে দূরে থাকার আরেকটি ব্যবহারিক উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, মানুষের উচিত তার সময়কে ভালো কাজে ব্যয় করা, যাতে গুনাহের সুযোগ না থাকে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha